লালমনিরহাটের অ্যাডভোকেট ময়জুল ইসলাম ময়েজ পেশায় একজন আইনজীবী হলেও তিনি বৃক্ষপ্রেমি মানুষ বটে। তবে প্রথাগত গাছপালা নয়, একটু ব্যতিক্রমী চাষাবাদে আগ্রহী তিনি।
এই কারণেই চাষাবাদের জন্য বেছে নিয়েছেন নানা প্রজাতির বৃক্ষের বাগান। লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের হরিদাস টেপারহাট গ্রামে শখের বশে গড়ে তুলেছেন বাগান। আর সেই বাগানবাড়ীতে নাগলিঙ্গম গাছে ফুল ফুটেছে। যেন অপরূপ সৌন্দর্যের পাশাপাশি সুগন্ধ ছড়াচ্ছে এ ফুলগুলো।
তবে নাগলিঙ্গম গাছের দেখা খুব একটা বেশি মেলে না। আমাদের এ দেশে মাত্র অর্ধ শতাধিক এই গাছ রয়েছে। প্রতি বছর মার্চ হতে জুলাই মাসে নাগলিঙ্গম গাছে ফুল ফোটে।
এ গাছের কাণ্ড থেকে শিকড়ের মতো বের হয়। সেই শিকড়েই ফুল ফোটে। একটি শিকড়ে অনেকগুলো ফুল থাকে। যেন ফুলে ফুলে গাছের কাণ্ড আচ্ছাদিত হয়ে যায়।
এ ফুলের রং লাল, গোলাপী আর হলুদ মিশ্রিত। আকারে বড়। পাপড়ী ৬টি এবং তুলনামূলক ভারি। ফুলের মধ্য ভাগে রয়েছে গর্ভাশয়। গর্ভাশয়টি সাপের ফণার মতো দেখতে। এর জন্যই হয়তোবা ফুলটির নাম “নাগলিঙ্গম”।
ফুল শুকিয়ে গেলে তাতে গোলাকৃতির বাদামি-খয়েরি বর্ণের ফল হয়। এই ফল হাতির পেটের রোগের জন্য উপকারী। এর অন্য নাম হাতির জোলাপ।
লালমনিরহাটের অ্যাডভোকেট ময়জুল ইসলাম ময়েজ-এঁর বাগানের নাগলিঙ্গম গাছটি বিশাল আকৃতির। অন্যান্য গাছের চেয়ে উঁচু। গাছটি তিনি তাঁর বাগানে রোপন করেছিলেন।
অনেকে এ বাগানবাড়ী পরিদর্শনে আসেন। তারা নাগলিঙ্গম গাছ ও এর ফুলে আকৃষ্ট হন। এবারও ফুল ফুটেছে। অনেকেই নাগলিঙ্গম ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য চলে আসেন এ বাগানে।
জানা যায়, সবুজ পাতার বৃহদাকৃতির গাছ ‘নাগলিঙ্গম’-এর আদি নিবাস মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বনাঞ্চল। এর ইংরেজি নাম ‘cannonball tree’ এবং বৈজ্ঞানিক নাম Couroupita guianensis। তবে কেউ কেউ মনে করেন ভারতেই এর উৎপত্তি এবং বিস্তার। বাংলাদেশেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিছু নাগলিঙ্গম গাছ আছে। তবে তার সংখ্যা খুবই নগণ্য। “নাগলিঙ্গম” প্রায় ৩০-৩৫ মিটার উচু হতে পারে। লম্বাটে ধাঁচের সবুজ পাতাগুলো গুচ্ছ আকারে থাকে। সাধারণত অন্যান্য প্রজাতির গাছের শাখা বা পাতার পাশ থেকে ফুল-ফল জন্মায়। কিন্তু নাগলিঙ্গমের ফুল ও ফল জন্ম নেয় সরাসরি মূল গাছের কাণ্ড থেকে। ফুলের পাঁপড়ির রং লালচে গোলাপী ও কেন্দ্র হালকা গোলাপী। নাগলিঙ্গমের সুবাসের বেশ খ্যাতি রয়েছে। ফুলের ঘ্রাণ অনেকটা শাপলা, পদ্ম ও গোলাপের সংমিশ্রণের মতো। তবে ফলে বেশ বাজে গন্ধ রয়েছে। ফুলের আকৃতি অনেকটা ফণাতোলা সাপের মতো দেখতে হওয়ায়, এর নামকরণ নাগলিঙ্গম হয়েছে বলে অনেকের ধারণা।
বিরল প্রজাতির এ উদ্ভিদের রয়েছে বেশকিছু ঔষধি গুণও। এই গাছের বাকল, ফুল ও পাতার নির্যাস দিয়ে তৈরি করা যায় এন্টিসেপটিক, এন্টিফাঙ্গাল ও এন্টিবায়োটিক। ম্যালেরিয়া উপশমেও এর পাতা ব্যবহায় হয় দক্ষিণ আমেরিকাতে।
উল্লেখ্য যে, অ্যাডভোকেট ময়জুল ইসলাম ময়েজ এর বাগানে ফলজ, বনজ ও ঔষধি সব ধরনের গাছ রয়েছে।